নারী। সৃষ্টির গৌরব। কর্মে-চেতনায় স্বতন্ত্র। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে একনিষ্ঠ। দক্ষতা ও সাহসিকতায় শীর্ষে। নানা প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে ঘরে ও কর্মক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নারী। সমকালীন বিশ্বে নারী নেতৃত্ব বা নারীর চিন্তাধারা অনেকটাই সুপ্রতিষ্ঠিত। এর সমর্থনে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরাও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন। তাই যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নারী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।  

করোনাভাইরাসের মহাসংকট বিশ্বজুড়ে। থমকে গেছে বিশ্ব। বৈশ্বিক এ সংকট মোকাবেলায় ঘরে ও বাইরে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন ‘দশভুজা নারী’। ‘কর্মই ধর্মের ব্রত নিয়েই এগিয়ে চলেছেন তারা। আমাদের দেশের নারীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। বর্তমান সংকট মোকাবেলায় নারী চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক ও শিক্ষিকা, উন্নয়ন কর্মীরা তাদের নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছেন।

চারিদিকে যখন স্বার্থের লড়াই, আপনরাই যখন পর হয়ে গেছে, সরকার যেখানে হিমশিম খাচ্ছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। তখন অনেক নারীই  করোনাকালে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন করে মায়েরা লুকিয়ে রান্না করে খাওয়াতেন মুক্তিযোদ্ধের। ঠিক একইভাবে আজ এক ভিন্নরকম যুদ্ধে-মহামারীর সময়ে তারা ভয় পেয়ে না পিছিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শুরু করেছেন ‘মানুষের তরে মানুষ’। "জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণী নানা সময়ে নানান মানুষের মধ্যে প্রতিফলিত হতে দেখেছি আমরা। তবে বিশাল এ পৃথিবীতে এই মানুষগুলোর সংখ্যা একেবারেই যৎসামান্য। তারপরও এই মানুষগুলি আছে বলেই আহাজারি পৃথিবীটা এখনও বাঁচার স্বপ্ন দেখে। হৃদয়হীনা দরিয়ায় ভালোবাসার মেলবন্ধন তৈরি করা এক শিক্ষিকার গল্প বলব আজ। তিনি বগুড়া ধুনটের এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান স্কুল শিক্ষিকা ফৌজিয়া হক বিথি।করোনা মহামারী থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন স্কুল শিক্ষিকা ফৌজিয়া হক বিথি। করোনা শুরু থেকে নিজ হাতে তৈরি মাস্ক বিতরন, গরীব অসহায় পরিবারের মাঝে ত্রান সামগ্রী, অসহায় বিধবা নারীদের শাড়ি ও বস্ত্র বিতরণ, শিশুদের খাতা কলম ও ঈদের নতুন পোশাক, শুধু তাই নয় বিশেষ করে নির্যাতিত নারীদের বিচার পেতে সবার আগে এগিয়েছেন এই নারী। তার ভাষ্যমতে অনেক নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়িয়েছে দুই যুগে। নির্যাতিত নারীরা তাদের পারিবারিক বন্ধন ফিরে পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে অনেকের জন্য গিয়েছেন তিনি। তার কারণে অনেক নারীই ফিরে পেয়েছে স্বপ্নের সুখের নীড়। সমাজসেবা ও মানবিক কাজের কল্যাণে অবদান রাখায় অনেক বার  পুরষ্কারও পেয়েছেন তিনি। বগুড়া জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরষ্কার পেয়েছেন দুই বার, বর্তমানে করোনা মহামারীতেও তিনি ভুলে যাননি অসহায় পরিবার ও মানুষের কথা। তিনি এবারো অসহায় মানুষের জন্য রোমজান ও ঈদ উপলক্ষে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন- মানুষের জন্য যে করে তার কোন দল-মত,সম্প্রদায় শ্রেণী  নেই। এরা হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ যে কোন ধর্মে আটকে থাকে না।
দল মত সম্প্রদায়, শ্রেণী, ধর্ম তো মানুষের পৃথিবীটাকে ছোট করে দেয়, মানুষ থেকে বিভক্ত করে দেয় একশোতে হাজারে কোটিতে। এরা শুধু পরিবার, পরিজন, আত্মীয় স্বজনেও আটকে থাকে না।
মানুষের জন্য করে যাওয়া মানুষ গুলো শুধুই মানুষের দলের, মানবতার দলের। তাদের পরিচয় তারা মানবিক মানুষ। এই মানুষের জন্য কিছু করা তাদের নেশা। তাদের নেই কোন প্রাপ্তি কিংবা অপ্রাপ্তির হিসেবের খাতা। নাম যশ প্রতিপত্তির মোহ এদের টানে না, যেটুকু করে অন্তর থেকেই করে।
    "সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই"

বিডিওয়ানপেপার/এস এম ফজলে রাব্বী শুভ, ধুনট, বগুড়া।

Post a Comment

ধন্যবাদ,
আপনার মন্তব্যের জন্য।

أحدث أقدم