এস এম ফজলে রাব্বী শুভ, ধুনট, বগুড়াঃ-
আজ ২১শে আগস্ট। বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার ১৬তম বার্ষিকী। বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে অকল্পনীয় এক নারকীয় গ্রেনেড হামলার ঘটনা বাংলাদেশে এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের জন্ম দেয়। বগুড়ার ধুনটে যথাযোগ্য মর্যাদায় একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে ২১ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে ধুনট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ধুনট সদর পাড়া প্রদ্যুত-অভিজিৎ স্পোটিং ক্লাবের আয়োজনে, ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম রেজার সার্বিক সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হয়। ধুনট প্রদ্যুত-অভিজিৎ স্মৃতি স্পোটিং ক্লাবের সভাপতি রনি সাহার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুজন সাহার সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জননেতা জনাব আব্দুল হাই খোকন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম সোবাহান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহসীন আলম, ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা, বগুড়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জনাব নাজনিল নাহার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল আউয়াল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রেজাউল করিম মিন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম চাঁন, গবেষক আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক বনি আমিন মিন্টু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইদুল সরকার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাইদুল ইসলাম রনি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ডেভিট, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শামিম হোসাইন, গোসাইবাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ সুজন, যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন স্বাধীন, ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম মিঠু সহ আরও অনেকে।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত পৈশাচিক এই হামলায় সেদিন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী বেগম আইভি রহমান সহ ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন তাদের টার্গেটে থাকা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় ছয় রাউন্ড গুলি। দেশরত্ন শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হন, তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সেদিন বিকাল ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের পর সারা দেশে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে শোক মিছিলের কর্মসূচি ছিল। বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। শেখ হাসিনা বিকাল ৫টার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান। বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ জিপ থেকে নেমে নিরাপত্তাকর্মী বেষ্টিত অবস্থায় তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাকের ওপর তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে উঠে বক্তৃতা শুরু করেন। ২০ মিনিটের বক্তৃতা শেষে 'জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু" উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা তার হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগোচ্ছিলেন মঞ্চ ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে।
সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ দিক থেকে মঞ্চ লক্ষ্য করে একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। গ্রেনেডটি মঞ্চের পাশে রাস্তার ওপর পড়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এরপর একে একে আরো ১২টি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আতঙ্কে মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। গ্রেনেডের আঘাতে মঞ্চের নিচে রাস্তার ওপরে বসা বেগম আইভি রহমানসহ অসংখ্য মানুষ লুটিয়ে পড়েন। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য ছিলেন শেখ হাসিনা। পরিস্থিতির তাত্পর্য বুঝতে পেরে মঞ্চে উপস্থিত ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাত্ক্ষণিকভাবে এক মানবঢাল তৈরি করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন। পরে শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়ির ওপরও গুলি বর্ষণ করা হয়।
হতাহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, আরো শতাধিক নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শমরিতা হাসপাতালসহ রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিত্সা দেওয়া হয়। উক্ত আলোচনা সভায় নেতা কর্মীরা ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচারের দাবী জানানো হয়।
إرسال تعليق
ধন্যবাদ,
আপনার মন্তব্যের জন্য।